নাটোর প্রতিনিধি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দিনব্যপী অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভা মূলত ভোটারদের কাছে এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের জবাবদিহিতায় পরিণত হয়েছিলো।
এদিন, দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ তাদোর অভাব-অভিযোগ তুলে ধরার পাশাপাশি করোনা মহামারীর দিনগুলোতে সাংসদ বকুলের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই সাথে লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবৈধ অর্থ লেনদেন, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজী কঠোর হস্তে রোধ করায় সাংসদ বকুল সাহসী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এই মতবিনিময় সভা থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ আগামী দিনগুলিতে আরও গণমূখী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সাংসদ বকুলকে পরামর্শ দিয়েছেন৷ সাংসদ প্রত্যেকটি পরামর্শ গুরুত্বের সাথে শোনেন এবং লিপিবদ্ধ করেন।
অপরদিকে, দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের নিকট দলীয় কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নে জোর দাবী জানান। তারা বলেন, বিএনপি অধ্যুষিত এই দুই উপজেলায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে শহিদুল ইসলাম বকুল নির্বাচিত হয়েছেন তা আগামী দিনে তাঁর নেতৃত্বেই এই জনপদে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দিক নির্দেশ করে। তাই দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান। আগামী সম্মেলনে দলের নতুন কমিটিতে কোনো দুর্নীতিবাদ, মাদকাসক্ত ও বিএনপি-জামাত পৃষ্ঠপোষক না আসতে পারে সেদিক বিশেষ বিবেচনার জন্য সাংসদের নিকট আহ্বান জানান।
শ্রমঘন ও শিল্প অধ্যুষিত লালপুর এলাকার আখচাষী-কৃষক-শ্রমিকরা সাংসদ বকুলের নিকট দাবী করেছেন, তিনি যেনো মহান জাতীয় সংসদে চিনি শিল্প বাঁচাতে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের উৎপাদন ক্ষমতার অনুপাতে লাভজনকতা আনয়নে আনঃকর্পোরেশন সমন্বয়ে ভূমিকা পালন করেন। সেই সাথে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের অভ্যন্তরে শিল্পপার্ক ও লালপুরে অর্থনৈতিক জোন পুনরায় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকারের নিকট দেনদরবার করেন।
নির্ধারিত বক্তৃতায় সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসীম সাহসিকতায়, ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সাথে দেশ পরিচালনা করছেন। দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন; কে, কোন দলের তা দেখে প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনা করেন না।
সাংসদ বকুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাগ্রতা, দৃঢ়তা ও চিন্তাশীল নেতৃত্ব কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, সমুদ্র বিজয়, নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মহাকাশ বিজয়, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষার নেপথ্যে আছে প্রধানমন্ত্রী সুযোগ্য দিক নির্দেশনা। এমনকি করোনা মোকাবিলায় শক্তিধর দেশগুলো হিমশিম খেলেও শক্ত হাতে শেখ হাসিনা অদৃশ্য ভাইরাস সামাল দিচ্ছেন। অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনো আক্রান্ত ও মৃতের হার কম। করোনায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এবং খাদ্য উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ আর তা হয়েছে শেখ হাসিনার কারনে।
শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সমস্যা নিরসনে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এর মাধ্যমে জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তব রূপ দিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে। অতীতের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা কাটিয়ে উঠে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত দেশ গড়তে শেখ হাসিনার সরকার গত মেয়াদে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে।
সাংসদ বকুল বলেন, ‘লালপুর-বাগাতিপাড়ার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আমি আমার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছি। যখন নাটোরে অবস্থান করি তখন এই জনপদের মানুষের সেবায় আমি সকালে ঘর থেকে বের হই, রাতে ঘরে ফিরি। মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার কারনে আমি আমার পরিবারের জন্য সময় দিতে পারিনা; এখন আমি লালপুর- বাগাতিপাড়ার প্রতিটি পরিবারকে আমার নিজের পরিবার মনে করি।
“এই জনপদের মানুষ একসময় জিম্মি ছিলো বিএনপি-জামাতের কাছে। তারা মানুষকে শোষণ করেছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর নিদারুণ নির্যাতন চালিয়েছে। আমি নিজেও কয়েকবার কারাবরণ করেছি, সেই সময়ের নির্যাতন কথা ভাবলে আজকে যারা রাজনীতি করেন তারা শিউরে উঠবেন। সেই জায়গা থেকে চিন্তা করেন আজ যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন, তারা কতটা শান্তিতে রাজনীতি করেন”-যোগ করেন বকুল।
তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে আমি এই জনপদের প্রতিনিধিত্ব করছি। এই জনপদের সড়কে সড়কে চাঁদাবাজী, অফিসে অফিসে ঘুষ-বাণিজ্য, মোড়ে মোড়ে মাদকের ব্যবসা ছিলো। আমি দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মধ্যে চাঁদাবাজী ও ঘুষ-বাণিজ্য বন্ধ করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। গরীব দুঃখি অসহায় মানুষের পাশে রযেছি সাধ্যমতো। করোনা সংকটে দুই উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক অসহায পরিবারের নিকট খাদ্য সহায়তা পৌছে দিয়েছি।’
লালপুর-বাগাতিপাড়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে সাংসদ বকুল বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে, শেখ হাসিনার নির্দেশনায়। আগামী দিনে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। এজন্য যা কিছু করনীয়, তা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের নির্দেশনার আলোকে করা হবে।
তবে বিএনপি জামাতের পৃষ্ঠপোষক, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা প্রকৃতির কেউ আগামী কমিটিত স্থান পাবে না বলে আশা করছি। আমরা রাজনীতি করবো রাজনীতি দিয়ে কোন প্রশাসনিক শক্তির সাহায্য নিয়ে নয়। যারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় নেতাকর্মীদের বিব্রত করে, মানহানি করে, নির্যাতন করে, তারা আর যাই হোক দলের ভালো চায় না। আমরা ন্যায়ের পথে, আদর্শ নিয়েই রাজনীতি করবো।